• Mon. Jul 14th, 2025

Azad 24

Learn Today Lead Tomorrow +8801933307999

হাজিদের সেবা করার সুযোগ পাওয়া বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। কারণ হাদিসের ভাষ্য মতে, হাজিরা মহান আল্লাহর মেহমান। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী এবং  হজ ও ওমরাহ আদায়কারী—এঁরা আল্লাহর ওয়াফদ (মেহমান)। আল্লাহ তাঁদের ডেকেছেন আর তাঁরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

তাঁরা আল্লাহর কাছে চেয়েছেন আর আল্লাহ তাঁদের দিয়েছেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৬১৩)এ ছাড়া তাঁরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশে প্রেরিত প্রতিনিধি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, হাজিরা আল্লাহর মেহমান। এবং নিজের ‘সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি’।(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১২৬৫৯)

সাধারণত পরিভাষায়  ‘ওয়াফদ’ বলা হয় সরকারি মেহমানকে। দেশের সরকার যত বড় পর্যায়ের হবে, মেহমানের মর্যাদাও তত বেশি হবে। এরপর তিনি যদি সরকারের পক্ষ থেকে দাওয়াতপ্রাপ্ত হন তাহলে বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব বহন করবে।

যেহেতু হাজিরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বাদশাহ আল্লাহর মেহমান এবং নিজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতিনিধি, তাই তাঁদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে হজ এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা নিজেদেরকে তাঁদের সেবায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন।আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও হজের সময় হাজিদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ‘অতঃপর নবীজি (সা.) জমজমের কাছে এলেন। দেখলেন, লোকেরা হাজিদের জমজমের পানি করানোর খিদমতে নিয়োজিত। এ দৃশ্য দেখে তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের কাজে ব্যস্ত থাকো। কারণ তোমরা ভালো কাজের মধ্যে রয়েছ।যদি এ কাজে আমার উপস্থিতির কারণে লোকদের ভিড় বেড়ে গিয়ে তোমাদের কাজে ব্যাঘাত হওয়ার আশঙ্কা না হতো, তাহলে আমি কূপ থেকে পানি তোলার রশি এখানে চড়িয়ে নিতাম, অর্থাৎ নিজ কাঁধে উঠিয়ে নিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬৩৫)হাজিদের খিদমতে সাধ্য অনুযায়ী খরচ করা বা তাঁদের সেবায় নিয়োজিত থাকা—নবীজির এই সুন্নাহ পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের মধ্যেও ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত ছিল। আব্দুল্লাহ ইবেন আমর (রা.)-এর ঘটনা। সুলাইমান ইবনে রাবি (রহ.) থেকে বলেন, আমি বসরার এক কাফেলার সঙ্গে হজের সফরে ছিলাম। হজের পরে আমরা আব্দুল্লাহ ইবেন আমর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে রওনা করলাম। হঠাৎ আমরা উটের এক বিশাল বহর দেখতে পেলাম। এক শত উট যাত্রীবাহী ও দুই শত উট মালবাহী। আমরা লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম এ বহরটি কার? তারা বলল, এটি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর বহর। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, পুরোটিই কি তিনি নিয়ে এসেছেন। তারা বলল হ্যাঁ, পুরোটাই তাঁর।আমরা প্রশ্ন করলাম, একজন বিনয়ী ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী ব্যক্তি হয়েও তিনি কিভাবে এই বিলাসী বহর নিয়ে এলেন? তারা বলল, আপত্তি কেন করছেন? যাত্রীবাহী উটগুলো তিনি তাঁর দ্বিনি ভাই ও পাড়া-প্রতিবেশী হাজিদের যাতায়াতের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। আর মালবাহী উটগুলো দূর-দূরান্ত থেকে আসা হজযাত্রী ও মেহমানদের আহার ও আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনার জন্য রেখেছেন। বিষয়টি শুনে আমরা খুবই বিস্মিত হলাম। তারা বলল, আশ্চর্যের কিছু নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ধনী ও সম্পদশালী লোক। তিনি তো মনে করেন, তাঁর কাছে আসা সব হাজির মেহমানদারি করা তাঁর দায়িত্ব। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কোথায় আছেন? তারা বলল, মসজিদে হারামে অবস্থান করছেন। আমরা তাঁকে খুঁজতে বের হয়ে দেখি, তিনি কাবাঘরের পেছনে পাগড়ি ও দুটি চাদর পরে সাধারণ মানুষের মতো বসে আছেন। গায়ে কোনো জামা পর্যন্ত নেই। বাঁ দিকে জুতাটি ঝুলিয়ে রেখেছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমাদের আরো ভুল ভাঙল। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৪/৫৭৭)এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি যখন হজের সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর এলাকা মার্ভের বাসিন্দাদের একত্র করে বলতেন, ‘তোমাদের কে কে এবার হজে যাবে?’ যারা হজে যাওয়ার কথা জানাত তাদের থেকে তাদের হজের খরচাদি বাবদ জমা অর্থ নিজের কাছে নিয়ে নিতেন। সেগুলো একটি সিন্দুকে রেখে সিন্দুক তালা দিয়ে দিতেন। অতঃপর নিজ খরচে এলাকার সব হজযাত্রীকে নিয়ে হজের উদ্দেশে বের হতেন। সফরে মুক্তহস্তে উদারচিত্তে তাদের পেছনে খরচ করতেন। উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। মক্কা থেকে বিভিন্ন হাদিয়া-তোহফা কিনে দিতেন। এলাকায় ফিরে একটি দাওয়াতের আয়োজন করতেন। এরপর সিন্দুক খুলে প্রত্যেকের জমানো টাকা যার যার কাছে ফিরিয়ে দিতেন। (তারিখে বাগদাদ : ১/১৫৮)

By azad24

www.azadservice.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *