কতটুকু সম্পদ থাকলে কুরবানি দিতে হবে | যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব

Estimated read time 1 min read

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুরবানি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবাহের মাধ্যমে কুরবানি আদায় করতে হয়। কুরবানির জন্য উপযোগী পশু দিয়ে কুরবানি করতে হয়।

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, মুকিম, মুসলিম নর-নারী ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের ভেতরে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৬/৮৫)

কোরবানির নিসাব

সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমপরিমাণ, তা কোরবানির নিসাব।  

গতকাল শনিবার (৮ জুন) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম প্রতি গ্রাম ১৪৭ টাকা। সেই হিসাবে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য ৫২.৫*১৭১৪= ৮৯,৯৮৬ টাকা বা এর চেয়ে বেশি।

আর ১৮ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ৮১২৯ টাকা। সেই হিসাবে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মূল্য ৭.৫*৮৭.৪৫= ৭ লাখ ১০ হাজার ৮৮১টাকা।

উল্লেখ্য, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি ও বাড়ি, ব্যাবসায়িক পণ্য ইত্যাদি কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। (আলমগিরি : ৫/২৯২-২৯৩)

নিসাবের মালিক না হলে কোরবানির বিধান

নিসাবের মালিক নয় এমন ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা মুস্তাহাব। তবে তিনি কোরবানির নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯২)

কোরবানির সময়

১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে কোরবানি করা যায়। তবে ১০ জিলহজ ও দিনে কোরবানি করা উত্তম। আর কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানি করা সম্ভব না হলে ক্রয়কৃত পশু বা কোরবানির মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৪৫, আলমগিরি : ৫/২৯৫-২৯৭)

মিরাজ রহমান

১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র (যেমন টেলিভিশন, রেডিও, ক্যাসেট, খেলনার সরঞ্জামাদি) কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। (আল মুহিতুল বোরহানি : ৮/৪৫৫; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫)।

যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব
কোরবানির নেসাব হলো সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের হয়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি : ৫/২২২; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/২৯২)।

নেসাবের ক্ষেত্রে বছর অতিক্রান্ত হওয়া কি শর্ত?
কোরবানির নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কোরবানির তিনদিনের মধ্যে যেকোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১২)। বরং ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সে পরিমাণ নগদ টাকার সম্পদের মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব; বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকাসত্ত্বেও কোরবানি করলো না, সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১১৪)।

হারাম সম্পদের ওপর কি কোরবানি ওয়াজিব?
হারাম সম্পদের ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ওয়াজিব হয় না। তাই কোরবানিদাতা হালাল সম্পদ না থাকলে সন্দেহমূলক অর্থ হলেও ধার করে কোরবানি করবে এবং নিজ হালাল অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/২৫; আপকে মাসাইল আওর উনকা হল : ৬/২৫২)।

সুদভিত্তিক ব্যাংকের সাধারণ কর্মচারীর কোরবানি হবে?
সুদভিত্তিক ব্যাংকের সাধারণ কর্মচারী লেভেলের চাকরিজীবির বেতন হারাম নয়, তবে সন্দেহযুক্ত। তাই সে কারো কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে কোরবানি করবে। (আপকে মাসাইল আওর উনকা হল : ৬/২৫২)।

দাস বা গোলামের ওপর কি কোরবানি ওয়াজিব?
দাস বা গোলামের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। হজরত ইবনে উমর (রা.)-সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘গোলামের সম্পদে কোনো জাকাত নেই।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৩/১৬১)।

মুসাফিরের কোরবানির বিধান
যে ব্যক্তি কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করবে), তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৪; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৫)। হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘মুসাফিরের জন্য কোরবানির ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৪/৩৮২)।

মুসাফির ও মুকিম ব্যক্তির কোরবানি
কোরবানির সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে তৃতীয় দিন কোরবানির সময় শেষ হওয়ার আগে মুকিম হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিকে মুকিম ছিলো, এরপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে; এক্ষেত্রে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কোরবানি না দিলে গোনাহগার হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬; ফতোয়ায়ে খানিয়া : ৩/৩৪৬; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৯)।

নাবালেগ শিশু-কিশোর ও পাগলের কোরবানি
নাবালেগ শিশু-কিশোর ও যে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহিহ হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১৬)। তবে নিজের সম্পদ থেকে নাবালেগের নামে কোরবানি দেওয়া অভিভাবকের ওপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১৫)।

দরিদ্র ব্যক্তির কোরবানির বিধান
দরিদ্র ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কোরবানির নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করে, তাহলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯২)।

একান্নভুক্ত পরিবারে কোরবানি কয়টি করতে হবে?
একান্নভুক্ত পরিবারে একাধিক ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে (অর্থাৎ তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে) তাদের প্রত্যেকের ওপরই ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব। পরিবারের যতো সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পশু কোরবানি করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কোরবানি সবার জন্য যথেষ্ট হবে না। (ফতোয়ায়ে শামি : ৫/২২০; ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯২)।

ছেলে কোরবানির পশু কিনে পিতার নামে কোরবানি
ছেলে কোরবানির পশু ক্রয় করে পিতার (নামে) পক্ষ থেকে কোরবানি দিলে পিতার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না। বরং পিতার জন্য পৃথকভাবে পশু ক্রয় করে বা ঐ পশুতে নিজের মালিকানার অর্থ দিয়ে শরিক হয়ে কোরবানি আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩০২)।

সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে কোরবানি করা
সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে কোরবানি করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। হজরত হানশ (রহ.)-সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন আমি হজরত আলী (রা.)-কে দেখলাম, তিনি দুটি বকরি কোরবানি করলেন। তাকে বললাম ‘এটি কি? (আপনার ওপর তো একটি কোরবানি করা আবশ্যক ছিলো; কিন্তু দুটি করলেন কেনো?)’ বললেন ‘নিশ্চয়ই রাসুল (সা.) আমায় অসিয়ত করেছেন, যেনো আমি তার পক্ষ থেকে কোরবানি করি। এ কারণে আমি তার পক্ষ থেকে (একটি) কোরবানি করেছি।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২৭৯০; জামিউত তিরমিজি : ১/২৭৫; ইলাউস সুনান : ১৭/২৬৮)।

অন্যের ওয়াজিব কোরবানি আরেকজন আদায়ের বিধান
অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে সে ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নইলে তার কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের অনুমতি ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করে, তাহলে দেশীয় সামাজিক প্রচলনের কারণে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১১)।

মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি
মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃতব্যক্তি যদি অসিয়ত না করে থাকে, তাহলে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃতব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করে যায়, তাহলে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না; বরং গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (মুসনাদে আহমদ : ৮৪৫; ইলাউস সুনান : ১৭/২৬৮; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৬; ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫২)।

জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি
যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা জায়েজ, তেমনিভাবে জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ঈসালে সওয়াবের জন্য নফল কোরবানি করা জায়েজ। এ কোরবানির গোশত কোরবানিদাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৬)।

হাজি সাহেবদের ওপর কোরবানির বিধান
যে সকল হাজি সাহেব কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবেন, তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে সকল হাজি সাহেব কোরবানির কোনো দিন মুকিম থাকবেন, সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা জরুরি। এটি তিনি নিজ এলাকায়ও করতে পারবেন। (ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/২৯৩; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৫; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/১৬৬)।

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : azadarc@gmail.com
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours